কক্সবাজারের খুরুশকুল ইউনিয়নে ছাত্রলীগ নেতা ফয়সাল উদ্দিন (২৬) হত্যা মামলার প্রধান আসামি আজিজ সিকদারসহ গ্রেপ্তার চার আসামির চার দিনের রিমান্ড শেষ হয়েছে। তাঁদের পাঠানো হয়েছে জেলা কারাগারে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে পুলিশের এক কর্মকর্তা বলেছেন, জিজ্ঞাসাবাদে আসামিরা স্বীকার করেছেন স্থানীয় কলেজছাত্র নুরুল হুদা হত্যার প্রতিশোধ নিতে ফয়সালকে হত্যা করা হয়।
নিহত ফয়সাল উদ্দিনের বাড়ি খুরুশকুল ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের কাউয়ারপাড়ায়। তিনি কক্সবাজার সদর উপজেলা ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ছিলেন।
জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া তথ্যের বরাত দিয়ে পুলিশের ওই কর্মকর্তা বলেন, জিজ্ঞাসাবাদে আজিজ সিকদারসহ চার আসামি স্বীকার করেছেন স্থানীয় কলেজছাত্র নুরুল হুদা হত্যার সঙ্গে ছাত্রলীগ নেতা ফয়সাল উদ্দিন জড়িত ছিলেন। এত দিন ফয়সাল উদ্দিন এলাকার বাইরে ছিলেন। ৩ জুলাই বিকেলে তাঁকে (ফয়সাল) খুরুশকুল ইউনিয়নের ডেইলপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে ২ ও ৩ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের ত্রিবার্ষিক সম্মেলনে দেখা যায়। এরপর হামলার পরিকল্পনা করা হয়। সন্ধ্যায় সম্মেলন শেষে সিএনজিচালিত অটোরিকশায় বাড়ি ফেরার পথে ফয়সালের ওপর হামলা চালানো হয়। লাঠি ও ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করা হয় ফয়সালকে।
জিজ্ঞাসাবাদে প্রধান আসামি আজিজ সিকদারের দেওয়া তথ্যের বরাত দিয়ে পুলিশের ওই কর্মকর্তা বলেন, এক বছর আগে খুন হওয়া কলেজছাত্র নুরুল হুদা আজিজের ভাতিজা। নুরুলকে কক্সবাজার সিটি কলেজে হত্যা করা হয়। এ হত্যাকাণ্ডে ফয়সাল উদ্দিন জড়িত ছিলেন।
৩ জুলাই ফয়সালকে হত্যার ঘটনার বর্ণনায় আজিজ সিকদার জিজ্ঞাসাবাদে বলেছেন, ওই দিন ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সম্মেলনে ফয়সাল উদ্দিন ঢুকলে স্থানীয় লোকজনের মধ্যে উত্তেজনা ও ক্ষোভ বিরাজ করে। সম্মেলন শেষে বাড়ি ফেরার পথে তাঁর ওপর হামলা চালানো হয়। তবে হামলার সময় তিনি (আজিজ) ঘটনাস্থলে ছিলেন না। পরে খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যান।
পুলিশের ওই কর্মকর্তা বলেছেন, গ্রেপ্তার অপর তিন আসামি ফিরোজ আলম, রিয়াদ সিকদার ও মুহাম্মদ মুন্নাও একই সুরে কথা বলেন। গ্রেপ্তার চার আসামির বাড়ি খুরুশকুল ইউনিয়নের মধ্যমডেইল পাড়া ও পেঁচারপাড়ায়।
৭ জুলাই এই চার আসামিকে চার দিনের রিমান্ডে নেয় পুলিশ। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও কক্সবাজার সদর মডেল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) সেলিম উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, পুলিশের তদন্তে পাওয়া গেছে গ্রেপ্তার চার আসামি হামলার ঘটনার সঙ্গে সরাসরি জড়িত। চার দিনের রিমান্ড শেষে ১০ জুলাই সন্ধ্যায় আজিজ সিকদারসহ চার আসামিকে আদালতের মাধ্যমে জেলা কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
পরিদর্শক সেলিম উদ্দিন বলেন, রিমান্ডে আসামিরা আরও গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছেন। কিন্তু সেসব গণমাধ্যমে প্রকাশ করা যাবে না। মামলার এজাহারভুক্ত অন্য আসামিদের ধরতে অভিযান চালাচ্ছে পুলিশ।
পুলিশ জানায়, ৭ জুলাই ভোররাতে ঝিলংজা ইউনিয়নের খরুলিয়াবাজার এলাকার একটি বাড়ি থেকে মুন্না ও রিয়াদকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। আগের দিন ৬ জুলাই র্যাব সদস্যরা গ্রেপ্তার করেন আজিজ সিকদার ও ফিরোজ আলমকে। র্যাবের জিজ্ঞাসাবাদে আজিজ সিকদার ছাত্রলীগ নেতা ফয়সাল উদ্দিনকে হত্যার দায় স্বীকার করে বলেছিলেন, তাঁর নেতৃত্বে হামলায় অংশ নিয়েছিল ১৫ থেকে ২০ জন। অটোরিকশা থেকে নামিয়ে ফয়সাল উদ্দিনকে কুপিয়ে হত্যা করতে সময় লেগেছিল ৫ থেকে ১০ মিনিট।
হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় নিহত ফয়সালের বড় ভাই নাছির উদ্দিন বাদী হয়ে আজিজ সিকদারসহ ১৭ জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাতনামা আরও ৭-৮ জনকে আসামি করে কক্সবাজার সদর মডেল থানায় হত্যা মামলা করেন। এ পর্যন্ত পাঁচ আসামিকে গ্রেপ্তার করা হলেও বাকিরা ধরাছোঁয়ার বাইরে।
মামলার বাদী নাছির উদ্দিন বলেন, আজিজ সিকদারের নেতৃত্বেই পরিকল্পিতভাবে তাঁর ছোট ভাই ফয়সালকে হত্যা করা হয়েছে। নুরুল হুদা হত্যার সঙ্গে ফয়সাল জড়িত ছিলেন না। থানায় হওয়া সেই হত্যা মামলায় ফয়সালের নামও ছিল না।
কক্সবাজার-৩ (সদর-রামু) আসনের আওয়ামী লীগ দলীয় সংসদ সদস্য সাইমুম সরওয়ার বলেন, নিহত ফয়সাল উদ্দিন ভদ্র স্বভাবের ছেলে ছিলেন। তিনি বিবাহিত, তাঁর স্ত্রী আট মাসের অন্তঃসত্ত্বা। এলাকার প্রভাবশালী আজিজ সিকদার গংরা একটি হত্যা মামলায় ফাঁসাতে না পেরে ফয়সাল উদ্দিনকে কুপিয়ে হত্যা করেছে। তিনি ফয়সালের হত্যাকারীদের দ্রুত গ্রেপ্তার ও শাস্তি চান
পাঠকের মতামত